স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

বড় সাহেব

এত বড় সাহেব তিনি ভাই
চোখে পরেন চশমা তিনি
গলায় পরেন টাই ।
সারা গায়ে সেন্টু মাখেন
দিনে রাতে গাড়ি হাঁকেন
অভাবি কেউ এলে বলেন
পয়সা আমার নাই ।
এত বড় সাহেব তিনি ভাই ।
কালো টাকার পাহাড় গড়ে
সাহেব হলেন তাই ।

ইস্কাটনে বাড়ি করেন
ইন্টারকনে ডিনার ধরেন,
কোর্মা কাবাব খেয়ে বলেন
কি আর এমন খাই ;
এত বড় সাহেব তিনি ভাই ।।

বদল করবো

আমি স্থান বদল করবো
এখানে লতা গুল্ম নাই,
ঝোপনাই অফুরন্ত ছায়ার।
কোকিলেরা ডাকেনা এখানে,
পাখিরা করেনা কোলাহল।

আমি সমাজ বদল করবো
এখানে হৃদয় নাই, ভালোবাসা বলে কিছুই নাই-
কফিনে শরীর ঢেকে নির্বাসিত হয়ে গেছে
মায়াবী সুখের ফুটফুটে শিশু গুলো।

আমি সমস্ত কিছু বদল করে নিয়ে যাবো
আমার নিজের কপাল লয়ে ছুটবো নিরুদ্দেশে
পুড়ে ছাই করে দিয়ে যাবো আমার সমস্ত
স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ও সম্পদ।

আমি নতুন স্থান চাইবনা কারো কাছে
দুয়ারে দাঁড়িয়ে করবোনা চিৎকার-
'আমাকে তোমাদের মাঝে স্থান করে দাও
কাছে টেনে নাও মাংসল বুকের ভিতর'।

আমি আমাকে বদল করে নিয়ে যাবো
সীমাহীন অফুরন্ত মায়াবী জ্যোৎস্নায় \

কমিউনিটি রেডিওর বাস্তবতা

বাস্তব চিত্র:- উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
কমিউনিটি রেডিও কি: কমিউনিটি রেডিও হচ্ছে স্থানীয় একটি ছোট্ট বেতার কেন্দ্র। একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে এর সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ ও তাদের জীবন কেন্দ্রিক সমস্যা ও সম্ভাবনা, চাওয়া পাওয়া ইত্যাদির উপর এর অনুষ্ঠান নির্মানে এতে গুরুত্ব দেয়া হয়। সংবাদ, তথ্য বিনোদন, নাটক, জীবন্তিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আলোচনা অর্থাৎ স্থানীয় সর্ববিষয়ে প্রচার প্রক্রিয়ায এলাকাবাসী সরাসরি অংশগ্রহনণ করে থাকে। স্থানীয় যে কোনো গুরুত্ত্বপুর্ণ তথ্য সংবাদ এ কেন্দ্র থেকে স্থানীয় জনগণ পেয়ে থাকে। যা কখনো জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় না।
স্থানীয় জনগণ রেডিও টিভিকে যে ভাবে দেখে:- গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের দক্ষিনপার্শে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে তারা ছোট নৌকা নিয়ে কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। রেডিও টিলিভিশনকে তারা বিনোদনের মাধ্যম হিসাবেই দেখে। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে স্থানীয় মানুষদের অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের সকলেই মত যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
জনগণের আকাঙ্খা:- নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় গণমাধ্যম বিষয়ক বেসরকারী সংস্থা ম্যাসলাইন মিডিয়াসেন্টার(এমএমসি)’র এক জরিপে দেখা যায়। এখানে হাতে গোনা মাত্র ক’জনের নিজস্ব রেডিও এবং যাদের অবস্থা অপেক্ষাকৃত একটু ভালো তাদের দু’একজনের ঘরে টেলিভিশন রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। বয়:বৃদ্ধরা জানিয়েছেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব পন্য স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, মাছ চাষ, গোবাদীপশু ও হাঁস মুরগি পালন, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়া চাষাবাদ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন। ১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক ভাবে বলা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘ইরাকে বোমায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

চৌমুহনী কলেজ

বিষন্ন দপুর মরে যায়
হলুদ বিকেল ছায়া ফেলে কলেজের আঙ্গিনা 'পরে
তখন বেরোই প্র্যাকটিকেল ক্লাশ থেকে ।
আঁতরের মতন জড়িয়ে থাকে
হাইড্রোজেন সালফাইড, ক্লোরিনের জল ।
এক স্বর্গ থেকে আরেক স্বর্গে রাখি পা
ছাত্র শূন্য কলেজের করিডোর ।
বাংলা কমার্স দর্শন ক্লাশ হয়ে গেছে শেষ-
বাংলা বিভাগের ক্লাশ শেষে
রূপসী মেয়েরা চলে গেছে
শাড়ির গন্ধ রেখে গেছে সবুজ ঘাসের পাতায়-
সেই ঘাসে রাখি পা, গন্ধ নেই
আবসন্ন শরীর জুড়াই সবুজ ঘাসের শরীরে ।
ইউকেলিপ্টাসের সূউচ্চ ডাল থেকে
কলেজ ডেকে বলে, ‘এসো,
আমার শরীরে শরীর রাখ, শব্দের মতন গতিশীল হও’
আক্ষরিক নীতি ছড়ায় তথাগত বুদ্ধের মতন ।

নারিকেল তলায় আযথা দাঁড়িয়ে থাকা
অবাধ্য পাখিদের মতন অর্থহীন উল্লাস
বায়হনিয়া অথবা বকফুল গাছ থেকে
ফুল তুলে আনা
উদাস কবিদের মতন সেই ফুল হাতে নিয়ে ঘুরা !
কলেজ আঙ্গিনা থেকে এই সব দৃশ্য
শেষ হবে কবে ?
বাংলা অধ্যাপকের সাথে ইদানিং সাহিত্য নিয়ে
তুমুল তর্কে মেতে উঠা
এই পৃথিবীর রাজনীতি কোন পথে যাবে
তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের আর কত দেরি
বিজ্ঞানের গভীর অরন্যে ডুব দিয়ে
কোন এক বিজ্ঞানী নতুন দিগন্ত করেছে প্রসার ।
সব কিছু সমাধা করে দেয়
কলেজ আঙ্গিনা পাড়া ।

একদিন এই সব মূহুর্তগুলো ইতিহাস হয়ে রবে ;
চোখের পলক, প্রতি পদক্ষেপ, হাসি গান
প্রেম আনন্দ কোলাহল ।
এই গনিপুর নরত্তমপুরের বুকের মধ্যে
চৌমুহনি কলেজের মূহুর্তগুলো
হৃদয়ের নির্বাচিত রক্তের করুন স্রোতে
ইতিহাস হয়ে জেগে রবে
শুধু জেগে রবে ।।

তথ্য সংকটের আবর্তে নোয়াখালীর ভূমিহীন

মেঘনা ও বঙ্গপোসাগর ঘেঁসা নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চল নানান ভৌগোলিক ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে অবস্থান করছে । এ অঞ্চলের মানুষ একদিকে নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন নতুন ভূমি সাগর বক্ষ থেকে জেগে উঠছে। একদিকে মানুষ ভূমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে খাসজমি পেতেও তারা নানান বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ দিনমজুরের কাজ করে। প্রায় তারা নিত্য টানাপোড়নের মধ্যে অভাবি জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এখনো অনেকেই যুগযুগ ধরে বংশপরম্পরায় ভূমিহীন অবস্থায় রয়ে গেছে। যদিও সরকারি নীতিমালায় নতুন খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার এইসব ভূমিহীনদের রয়েছে। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন নীতিমালার বিষয়ে অজ্ঞতার কারনে এরা খাসজমি বন্দোবস্ত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সব খেটে খাওয়া মানুষদের, যাদের নিত্য চাল আনতে পান্তা ফুরায় প্রতিদিন যাদের প্রচন্ড হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে দুবেলা অন্ন জোগাতে হয়, জীবন যাদের শত ছিন্নতায় বাঁধা, তাদের তথ্যের পিছনে ঘুরে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য শক্তি ও সামর্থ্যের অবকাশ কোথায়।
সার্বিকভাবে নোয়াখালীর ভূমিহীন সমস্যা অত্যন্ত প্রকট । নদী ভাঙ্গনের ফলে নোয়াখালীর বিভিন্ন জনপদ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে । এই নদীভাঙ্গনের কারনে বৃহত্তর নোয়াখালীর সুবর্ণচর, হাতিয়া, রামগতি ও কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিবছর বাস্তুভিটা হারিয়ে প্রতিনিয়ত ভূমিহীনে পরিণত হচ্ছে । স্বাধীনতার পরবর্তী কাল থেকে ভূমিহীনদের খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়া শুরু হলেও আজ পর্যন্ত এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন খাস জমি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। খাসজমি বন্দোবস্ত পেতে যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও জটিলতা রয়েছে তা ডিঙ্গানো একজন সাধারন ভূমিহীনের পক্ষে অসম্ভব ব্যপার । নতুন চর জাগলে ভূমিহীনরা সে চরে স্বাভাবিক ভাবে কখনো বসতি পায়না । একটুকরো জমির জন্য তাদের অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়। কখনো জড়িয়ে পড়তে হয় রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে। এখানে আছে ভূমিগ্রাসী জোতদার লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচার। এরা মধ্যযুগীয় কায়দায় দখল করে নেয় সরকারী খাসজমি গুলো। সংঘাত সংঘর্ষ হামলা মামলায় হারিয়ে যায় ভূমিহীনদের একটুকরো বাঁচার স্বপ্ন।
এসব কিছুর পরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে । বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্ন নীতিমালায় ভূমিহীনদের কিছু কিছু জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। তবে প্রায় ক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে যে, এর জন্য ভূমিহীনদের প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভূমিহীনদের নামে বেনামে জোতদাররা অনেক জমি নিজেরাই করায়ত্ত করে নিয়েছে। খাসজমি প্রদান ছাড়াও এরশাদ সরকারের আমলে গুচ্ছগ্রাম, বিএনপি সরকারের আমলে আদর্শ গ্রাম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রভৃতির মাধ্যমে ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নোয়াখালী সদর ও সুবর্নচরের চর মজিদ, চর মহিউদ্দিন , হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এর মাধ্যমে ভূমিহীনদের মাথা গুঁজার স্থান হলেও তাদের অধিকাংশেরই জীবন জীবিকার নিশ্চয়তা মিলেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে অনেক বরাদ্ধপ্রাপ্ত ভূমিহীনরা আশ্রয়ণ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশের ভূমিবন্দোস্ত নীতিমালায় ভুমিহীনদের রয়েছে অগ্রাধিকার। বিভিন্ন সময় সরকার এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন জারি করে থাকে। কিন্তু ভুমিহীনরা সে বিষয়ে থাকে একেবারে অজ্ঞ। এ সুযোগে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী লুটেরা চক্র ভুমিহীনদের সে সুযোগ ষোলআনা ভোগ করে নেয়। ফলে প্রকৃত ভূমিহীনরা থাকে বঞ্চিত অবহেলিত। নোয়াখালী সদরের সল্লা গ্রামের রিক্সা শ্রমিক আবুল কালামের(৪৫) শুধু ভিটির উপর দোচালার একটি ঘর রয়েছে। তিনি প্রতিদিন সেখান থেকে পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূরে সোনাপুর বাজার এবং এর আসেপাশে রিক্সা চালিয়ে থাকেন। এছাড়াও বাড়তি কাজ হিসাবে অন্যের জমি বর্গাও করেন। কিন্তু কিভাবে খাস জমি বন্দোবস্ত পেতে হয় তিনি তা জানেন না। ভূমিহীনদের জন্য যে সকল প্রজ্ঞাপন জারি হয় তাও তিনি কখনো শুনেননি অথচ ভূমি অফিস গুলোর কাছাকাছি প্রায় তিনি যাত্রি নিয়ে যাওয়া আসা করে থাকেন। সে অফিস গুলোতো এর অনেক তথ্য থাকলেও তার কাছে তা কখনো পৌঁছেনি। শুধু শুনেছেন টাকা দিলে জমি



পাওয়া যায়। তিনি জানান প্রতিদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে এর জন্য খোঁজখবর নেওয়ারও ফুরসত থাকেনা। তিনি আরো জানান, তার মত এ রকম আনেকেই আছেন যাদের এ বিষয়ে কোনো খবরই নেই। সুবর্ণচরের অসংখ্য ভূমিহীন বেড়ির পাশে কোনোরকম মাথাগুঁজার ঠাঁই করে আছে। আনেক আসহায় ভূমিহীন নারী ফসলি মাঠে কায়িক শ্রম করে আথবা সরকারী বেসরকারী সংস্থাগুলোর রাস্তা মেরামত বা মাটির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের আনেকেই উপায়হীন হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিও করে। এদের পাশেই ভূমিগ্রাসিরা নানান কায়দায জমি দখল করে আছে কিন্তু এদের ভাগ্যে একটুকরো জমিও মিলেনি। বেলী রাণী বনিক(৩৫)দের সন্দীপের কালাপানিয়াতে ছিলো বিপুল জায়গা জমি। প্রায় দশ বছর আগে স্বামী ভূবন চন্দ্র বনিক মারা যায়। নদীতে সব ভেঙ্গে গেলে দুটি কোলের শিশু নিয়ে নি:স্ব কপর্দক শূন্য হয়ে সুবর্ণ চরের শিবচরণ গ্রামের পশ্চিমে বেড়ির বাঁধে পাশে এসে আশ্রয় নেন। সুঠাম দেহের বেলীরাণী জানান, গায়ের গতর খেটেই তিনি জীবন যাপন করছেন। কখনো মাটিকাটা কখনো ধান ক্ষেতে বদলার কাজ যখন যা পান তাই করেন। সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে পান ৪০ টাকা এবং এক কেজি চাল। তিনি জানান এত কষ্ট করার পরও কোথায় কিভাবে জমি পাওয়া যায় তা তার জানা নেই। শুধু শুনেছেন, জমির জন্য আসলেই টাকা দিতে হয় তাই কখনো এদিকে পা মাড়াননি। ভূমিহীন লক্ষীরাণী দাস(২৫) জানান তিনি ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। এলাকার বিভিন্ন ক্ষেত খামারে বদলা দিয়ে কোনো রকমে আয় উপার্জন করেন। তিনি জানান কিছুটা পড়ালেখা জানলেও খাস জমি বন্দোবস্ত সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি জানেননা।


ডানিডার একটি মাটির প্রকল্পে তাঁর সাথে আরো অনেক মহিলা এ কাজ করেন। জাহানারা বেগম(৪০), ছকিনা খাতুন(৩৫), নূর জাহান বেগম(৫০), মিনতি রাণী পাল(৩৫), মোহছেনা বেগম(৪০) এই সব ভূমিহীন নারীরা কেউ জানেনা ভূমিহীনদের জন্য সরকারের কিকি নীতিমালা রয়েছে। অথচ এদের সামনে থেকেই এদের অধিকারের ভূমিগুলো ভূমিগ্রাসীরা খাবলে খাচ্ছে। আর এরা থেকে যাচ্ছে চির দীনহীন দিনমুজুরে। ধীরে ধীরে নি:শেষ হচ্ছে এদের জীবনী শক্তি। আর সর্বাঙ্গীনভাবে জাতি হয়ে পড়ছে দুর্বল থেকে দুর্বলতর।
নোয়াখালীর দক্ষিনাংশে সাগর থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভূমি জেগে উঠছে। অথচ সে ভূমির সঠিক ব্যবহার কখনো করা হয়নি। এদিকে আশংকাজনক ভাবে ভূমিহীনদের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কোন এলাকায় কত জমি আছে তার সঠিক তথ্য ভূমিহীনদের কাছে কখনো পৌঁছায়না। আর সে জমি গুলো নানান কায়দায় নানান ছল চাতুরিতে চলে যায় ভূমিগ্রাসীদের কব্জায়। ভূমি নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে খাসজমি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে একমাত্র ভূমিহীনদের। অথচ অসহায় নিরক্ষর ভূমিহীনরা এর সুফল ভোগ করতে পারছেনা। আবার এদের রক্ত ঘামে আমাদের গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি সচল রয়েছে। জাতী হিসাবে সর্বাঙ্গীন ভাবে আমরা অনেক পিছে পড়ে রয়েছি। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ভূমিহীন। দেশের অর্ধেক জনগণকে বাদ দিয়ে আমাদের সমৃদ্ধির কথা ভাবা বাতুলতা মাত্র। ভূমি সংক্রান্ত সঠিক তথ্য ভূমিহীনদের জানানো সরকারের গুরু দায়িত্ব। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ভূমিহীনদের কাছে সঠিক ভাবে খাসজমি বন্দোবস্ত দিতে পারলে কৃষি প্রধান এদেশের সামগ্রীক অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনবে তা আর কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা।


মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com