স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা #### মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
http://www.basbhumi.com/

বউ



বউ

মাহমুদুল হক ফয়েজ

সালামের বউ খুব একটা কথা বলেনা । এটাই হয়তো বৌ এর স্বভাব। একলা ঘরে দুজন বসে থাকে।বৌটা খুট খাট কাজ করে। মুখে সাড়া শব্দ নেই। সালাম বই এর পোকা।বই পড়তে পড়তে সময় যায় তার। ক’দিন থেকে বেশ গরম পড়ছে। গরমে সালাম উস্‌ খুস্ করে উঠে।সালাম যদি বলে, উঃ বড্ড গরম পড়ছে। বউ তবু কিছু বলবেনা। ইতি উতি তাকিয়ে একবার ফ্যানের দিকে তাকাবে। তারপর সুইচ বোর্ডের দিকে তাকিয়ে রেগুলেরেটরটা বাড়িয়ে দিবে। একটু দূর থেকে সালামকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে, ঠান্ডা বাতাসে এবার স্বামীর ভাবখানা কি হয়েছে।

সালামের চা এর খুব নেশা আছে। কখন সালাম চা খাবে বৌ ঠিক ঠিকই যানে। সকালে পেপার আসলে সালাম পেপার নিয়ে বসে। বৌ যানে এ সময়টাতে কি দরকার। সে নীরবে এসে সালামের সামনে চা এর কাপ রেখে যাবে। সালাম মাঝে মাঝে নিজেই আবাক হয়ে যায়। কেমন করে বৌটা এত কথা কম বলে। অথচ সংসারে কত কথা আছে। কত সুর আছে। এ অবস্থায় সালাম নিজেকে একদম সুখি ভাবতে পারেনা।

ওদের প্রথম সন্তান মেয়ে। তিন বছরের পিচ্চি সারা ঘর মাতিয়ে রাখবে। পিচ্চি কোলে নিয়ে অনেকে তুলতুলে গাল টিপে বলবে, প্রথমটা মেয়ে-আপনারা তো খুব ভাগ্যবান, সালাম হেসে বলে,’হ্যাঁ তাড়াতাড়ি শশুর হয়ে যাবো।বাঙালী মেয়েদের আগে বিয়ে হয়ে যায তো’।

সালামের বৌ কথা বলবেনা, কথা গিলবে, মিষ্টি মিষ্টি হাসবে। সালামের ভাবী রসিয়ে বলে তোর বৌ এত কম কথা বলে ক্যান।ও কি আসলেই কথা কম বলে? সালাম বৌয়ের দিকে তাকায় । বৌ লাজুক দৃষ্টিতে একবার সালামের দিকে একবার ভাবীর দিকে তাকায়।দৃষ্টিটাই যেনো তার কথা।

দ্বিতীয় বার বৌ পোয়াতী হল।
মেয়ে পিচ্চি ছেলে পিচ্চি সালামের কোন সংস্কার নেই। ওর কাছে দুটোই সমান। তবু মনের কোনে মেঘফাটা সোনলি রোদ্দুরের মত একটুকরো আকাঙ্খা ঝিলিক দিয়ে উঠে। প্রথমটা মেয়ে পরেরটা যদি – ভাবনা আর বাড়ায়না সালাম। তবু কেনো জানি আযাযিত ভাবনা গুলো বার বার এসে জেঁকে বসে ওকে।

সামনে ঈদ। নতুন আনন্দে এবারও বৌকে নতুন করে সাজাবে সালাম।প্রতি ঈদে কিছুনা কিছু উপহার দেয়। এবার কি দিবে বৌ ?সালাম কিছু বলেনা। বৌ নিবীড় স্নিগ্ধতায় সালামের চোখের কোনে তার আকাঙ্খার রোদ্দুরে উঁকি মেরে দেখে।

একটা ঘরকে আঁতুর ঘর করা হয়েছে। যথা সময়ে একজন দাইও এসে গেছে।
আঁতুর ঘরের দরজার বাইরে সালাম ইতঃস্তত পায়চারি করে। তার অপেক্ষার রথ যেন দ্রুত বেগে ছোটে। উদ্বেগে সময় যায়না। একটা তীব্র কান্নার ধ্বনি ভেসে আসে। সালাম কান খাড়া করে শুনে।বুকের মধ্যে উন্মাতাল ঝড় বয়ে যায়।
দাই দরজা ফাঁক করে মুখ বাড়িয়ে হেসে বলে-‘ছেলে’। সালাম দরজার ফাঁকে দেখে, বৌ এর চোখে উচ্ছাস যেন খেলা করে । এক পলক দু’পলক। বৌ কি কথা বলে উঠলো। সালাম খুশিতে ডগমগ করে উঠে।

ঈদের আগেই যে ঈদের উপহার পেয়ে গেলো সালাম।


মাহমুদুল হক ফয়েজ

মুঠোফোন- ০১৭১১২২৩৩৯৯

e-mail : mhfoez@gmail.com


কালো সূতা

কই যাইবেন স্যার? ঘাড় বাঁকা করে তাকাতে তাকাতেই আট দশ বছরের একটি চটপটে মিষ্টি ছেলে সামনে ব্যগ ছুঁয়ে দাঁড়ালো। ঢাকার কমলাপুর ষ্টেশানে এরকমই হয়। হাল্কা ব্যাগ নিজেই নিতে পারবো। শীতের ঝাপটাটা একটু বেশী। মাফলারটা আরেকটু জড়িয়ে ব্যাগের হাতলটা আরো জোরে ধরে কিছু না বলেই ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে এগুতে লাগলাম। পয়সা লাগবোনা স্যার। মিষ্টি হেসে ব্যাগটা একরকম ছিনিয়ে কোলেই নিয়ে নিলো। চিটাগাঙ্গ যাইবেন স্যার? সপ্রতিভ প্রশ্ন করে আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। কোনো উত্তর দিলামনা। আমার চোখের দৃষ্টিতে মৌনতা। ছেলেটি আমার মনের ভাব বুঝলো। খুশি খুশি ভাব নিয়ে বল্ল, আমিও যামু। তুই কই যাবি ? ভৈরব, স্যার। ততক্ষণে ট্রেনের কাছে এসে গেছি। প্ল্যাটফরমে কেউ দাঁড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে। কেউ নির্দিষ্ট কামরায় উঠছে। পত্রিকার হকার ব্যস্ত তার পত্রিকা বিক্রির কাজে। কোন কামরা স্যার ? ঝ-চৌত্রশ, এইতো এই কামরা। আমার আগেই লাফ দিয়ে উঠে পড়লো ছেলেটা। সিটের নাম্বার খুঁজে ঠিক মতই এসে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে হাসলো যেনো একটা রাজ্য দখল করে ফেলেছে। ব্যাগটা উপরে রাখতে রাখতে বল্লাম, কি নাম তোর ? একটা আদুরে গলায় সামনের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বল্ল,- নয়ন বাড়িতে কে আছে তোর ? মা আছে। বাবা নাইক্কা। তিন চাইর বছর আগে মারা গেছে। কইলজাত ব্যরাম আছিলো। ঢাকা কেনো আসলি- কাকার কাছে। মা পাঠাইছে। ট্যাকা পামু। পাইছস্ ? না । টাকা না নিয়া যাচ্ছিস যে। মা কইয়া দিছে আইজকা ফিরা যাইতে। মা ইষ্টিশানে থাকবো। চোখে ভেসে উঠলো আকুল করা এক স্নেহময়ী মা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে এক সন্তানের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এক বুদ্ধিদীপ্ত চঞ্চল শিশু মা বলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এক বিশাল অভয়ারণ্যে। ততক্ষণে ট্রেন ষ্টেশান ছেড়ে এগুতে লাগলো। মানিব্যাগ থেকে পাঁচ টাকার একটা নতুন নোট বের করে নয়নের চোখের সামনে ধরলাম। খুব লজ্জা আর ইত:স্তত হাতে টাকাটা পেয়ে খুশিতে আটখানা। টাকায় নতুনের গন্ধ এখনো লেগে আছে। টাকাটা উল্টেপাল্টে দেখে নাকে লাগিয়ে গন্ধটা নিলো। কৃতজ্ঞতায় চোখটা যেনো জ্বলজ্বল করে উঠলো। বল্লাম- কিছু কিনে খাইস। না, যাইয়া মারে দিমু । নতুন ট্যাকা, মা খুশি হইবো। ডান হাতটা তুলে আমাকে একটা সালাম ঠুকে দিলো। হাত তুলতেই দেখি একটা কালো মোটা সূতা হাতের কব্জিতে বাঁধা। আমি ওদিকে সপ্রশ্ন তাকাতেই বল্ল, মা বাঁইধা দিছে। মুখ দোষের। কোনো ক্ষতি যেন না হয়। হারাইয়া যেনো না যাই। বাংলার এ এক সনাতন সংস্কৃতি। স্নেহময়ী মা তার সন্তানের আসু অকল্যান থেকে মুক্ত রাখার জন্য কালো সূতা বেঁধে দেয়। ট্রেন ততক্ষণে বিমান বন্দর পেরিয়ে টঙ্গির দিকে জোর গতিতে এগুচ্ছে। নয়ন বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে এতোক্ষণ ট্রেনের সাথে সাথে দুলছিলো। স্যার একটু সামনের থাইক্য আসি । আর দাঁড়ালো না । অনেকটা দ্রুতই চলে গেল সামনে। বাইরে হালকা কুয়াশার চাদর এখনও কাটেনি । শীতের হালকা রোদ কুয়াশা ভেঙে কিছুতেই যেন বেরিয়ে আসতে পারছেনা । শীত-ভোরের আরামের ঘুম ছেড়ে আসতে হোল । তার রেশ এখনো লেগে আছে চোখে । একটু ঝিমুনি এলো । সময় কতক্ষণ গেল মনে নেই। হঠাত বিকট শব্দ আর প্রচন্ড ধাক্কায় কামরার লোকজন সব ছিটকে পড়লো। এ ওর গাযের উপর পড়ে এক বিভত্স অবস্থা। চারদিকে হৈ চৈ শোরগোল। আমাকে আবিষ্কার করলাম কামরার এক কোনে উপুর আবস্থায়। ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। আহত নারী পুরুষের আহাযারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠলো। আমাদের কামরা একেবারে উল্টে না গেলেও লাইন থেকে পড়ে কাত হয়ে আছে। কামরা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামলাম। চর্তুদিক থেকে গ্রামের লোকজন ছুটে আসছে। মৃত্যুর এক বিভীষিকা যেন নেমে এলো শান্ত স্নিগ্ধ পুবাইল গ্রামে। দু্ই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ। সামনের কামরাগুলো সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। মুহুতে মনে হলো নয়ন তো সামনে গেল। বুকটা অজানা আশংকায় হু হু করে উঠলো । প্রচন্ড ভীড়, আহত আর নিহতদের রক্তাক্ত দেহ। না, নয়নকে তো কোথাও দেখছিনা। আকাশ বাতাস কাপিঁয়ে নয়ন নয়ন বলে চিৎকার করে ডাকতে গেলাম। একটা দুমড়ানো মুচড়ানো কামরার সামনে দেখলাম প্রচন্ড ভীড়। কয়জন লোক বহু চেষ্টা করেও একটা কামরাকে কিছুতেই সরাতে পারছেনা। ভীড় ঠেলে কামরার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম । লোহার ভারী কামরার নীচে চাপা পড়ে আছে একটি ছোট্ট নিথর নিস্তেজ দেহ। শুধু মুষ্টি বদ্ধ একটা তুলতুলে হাত কুয়াশার হিমেল চাদর জড়িয়ে উর্দ্ধমূখী হয়ে আছে। শত শত উৎসুক দৃষ্টি দেখছে হাতের মুঠিতে একটি কচকচে পাঁচ টাকার নোট আর কব্জিতে বাঁধা রয়েছে একটি কালো সুতা।

তোমাকে চিনেছি ঘাতক


তোমার মুখোমুখি আমি দাঁড়িয়েছি, ঘাতক-

তোমাকে চেনার এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার ।
আমাকে অপোক্ত অবুঝ ভেবে পায়ে পরিয়ে দিয়েছো
চলত্শক্তিহীন পাদুকা, হাতে তুলে দিয়েছো লাঠি-লজেন্স ।
আমার মেধা লাফিয়ে উঠার আগেই,
মাথায় পরিয়ে দিয়েছো
ঢাকনার মত কারুকার্য টুপি।
আমার ফুসফুস হৃৎপিন্ডে ঢেকে দিয়েছো শক্ত বর্ম ।
আমার আঙুল গুলোকে কর্মহীন নিস্ক্রিয় করার জন্য
প্রতিটি আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়েছো চাকচিক্য আংটি ।
আমি সুসজ্জিত হয়ে নির্বোধ বালকের মতন
তোমার বৃত্তে দাঁড়িয়েছিলাম এতকাল ।
আমি আজ বুঝতে পারছি, যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার ।
আমার বুদ্ধির জন্ম যখন হয়নি তখন আমার পিতা
অত্যন্ত সাবলিল ভাষায় আমার উদ্দেশ্যে
লিখেছিলেন স্বাধীনতার সোনালী চিরকুট
বুক পকেটে রাখা সেই চিরকুট লক্ষ করে
তুমি খুব নিপুন নিশানায় গুলি ছুঁড়লে-
চিরকুট ফুঁড়ে গুলি বিশাল হৃৎপিন্ডে ঠেকলো ।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি-
সিঁড়ি গলিয়ে আমার রক্তাক্ত পিতা
দুমড়ে মুচড়ে সিঁড়ির শেষ ধাপে এসে থামলেন-
নির্বাক নিথর-আমার কোলে-
যেখানে এসে আমি দাঁড়িয়েছিলাম,
আমার উদ্গারিত উত্থানের প্রথম সিঁড়ি-
আজ সেখান থেকে আমার শুরু ।

সিঁড়ি বেয়ে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছিল গল গল গল গল করে রক্ত
আমি সে রক্ত বেয়ে পিচ্ছিল সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালাম-
সেখানে তোমার শেষ গুলিটি শেষ লক্ষ ভেদ করে গেছে ।
তোমার মুখোমুখি আমি দাঁড়িয়েছি, ঘাতক
তোমাকে চেনার এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার ।
সেবারের শীতে উদাম শরীরে কষ্টে অসহায় ছিলাম
তুমি আমারই শস্য ক্ষেত জ্বালিয়ে-আমাকেই উত্তাপ দিয়েছিলে ।
ক্ষুধায় অতীষ্ট হয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল আমার,
তুমি আমাকেই সওদা করে, বিক্রি করে
ক্ষুধা নিবারণ করে তুষ্ঠ করলে ।
আমি আমার প্রকৃতির বসন্তে এসে উপলব্ধিতিতে দেখতে পাচ্ছি-
অজীর্ণ অসুস্থ পুরোনো পাতা ঝরে
নতুন পাতাদের চঞ্চলতা-
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
আমার ভিতরে আমি নিয়ত জন্ম নিচ্ছি শঙ্কাহীন উদ্দাম ।
তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি, ঘাতক-
তোমাকে চেনার এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার ।

সমাধি



তোমার পুষ্পিত সমাধিতে

দে'শলাই'র মতন
শরীর ঘসলে-
জ্বলে উঠে
লক্ষ্য কোটি
ঘুমানো বারুদ।


** আজ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন** ।

নটের গুরু


নটের গুরু ঢোলে দিলো টোকা ;


দেশ জুড়ে রাষ্ট্র হলো

সাধু খেলো ধোঁকা।



কালোবাজার চাঙা করে

সাদা টুপি মাথে,

শয়তানীরে পকেট পুরে

তসবিহ্ নিলো হাতে।



নটের গুরু দেখতে ভারি কালো,

জগত্ জুড়ে দেখায় তারে

আঁধার রাতের আলো।



ভাজা মাছটি উল্টে দেখে

যেন কচি খোকা-

নটের গুরু ঢোলে দিলো টোকা

ভাঙার গান



ভাঙো ভাঙো ভেঙ্গে গড়ো

পর্ণোকুটির প্রাণে ধরো
সাতমহলা কি হবে ভাই
প্রাণ যদি মোর খুঁজে না পাই।

আপন ধনে সওদা করে মন মাঝি ব্যাপারি
ধান্ধাবাজে ধান্ধা করে পর ধনে পোদ্দারি \

মুষ্টিচাল


মুষ্টিচাল বাংলার গ্রামীণ জনপদের এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন সংস্কৃতি। যুগযুগ ধরে গ্রামীণ নারীরা প্রতিদিনের রান্নার চাল থেকে একমুঠো চাল তুলে আলাদা হাঁড়িতে জমাকরে রাখে। পরে কখনো অভাব পড়লে অথবা প্রয়োজন পড়লে প্রতিদিনের এই জমানো চাল দিয়ে সে সংকট কাটিয়ে নেয়। প্রতিদিন এভাবে চাল তুলে রাখলে দৈনন্দিন রান্নার তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। অবস্থাপন্ন পরিবারের গৃহিনীরা আবার সঞ্চয় করার লক্ষ্যেও মুষ্টিচাল তুলে রাখেন। তারপর সঞ্চিত চাল বিক্রি করে সংসারের নানান প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করেন। নারীদের উপরই ন্যস্ত থাকে পুরো সংসার। সংসারের পুরো ব্যবস্থাপনাও থাকে তাদের হাতে। পুরুষরা বহির্মুখী। প্রায়ই ঘরের খবর তাদের জানা থাকেনা। মাঝেমধ্যে সংসারে চলে টানাপোড়েন। কখনো রান্নার চালও থাকেনা ঘরে। সংসারে দুর্ভোগ পোহাতে হয় গৃহিনীদেরই। সেই দুর্ভোগ কাটানোর জন্য সতর্ক গৃহিনীরা এই ব্যবস্থাকে সুনিপুন ভাবে কাজে লাগিয়ে থাকে। বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মুষ্টিচাল তুলে রাখা একটি সনাতন ঐতিহ্যও বটে।মুষ্টিচালের সনাতন এই ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নোয়াখালীর একলাশ পুর ইউনিয়নের দালানবাড়ি এলাকার একদল নারী প্রতিদিনের রান্না থেকে একমুঠো করে চাল সংগ্রহের মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে সচেষ্ট হচ্ছেন। এলাকার ২৮জন নারী নিজেরা উদ্যোগী হয়ে গড়ে তুলেছেন ‘মুষ্টিচাল মহিলা সমিতি’। একাজে সবাইকে উত্সাহ যুগিয়েছেন সে এলাকার একজন স্কুল শিক্ষিকা শাহানা কবির। তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে ২০০০ সালে প্রথমে তাঁর বাড়িতে এ কাজ শুরু করেন। তাঁদের এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের অনেক যায়গায় নারীরা সংগঠিত হয়ে এ ধরনের আরো উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।বাংলার গ্রামীণ নারীদের তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য দিয়ে সঙ্গবদ্ধ করে কোনো মহ॥ত্ কাজ করার জন্য মুষ্টিচাল ঐক্য ও শক্তির রূপক হিসাবে কাজ করতে পারে।

মুড়ি প্রকল্প


মুড়ি বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে। মুড়ি খায়না এরকম বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী ভোলা বরিশালের চরাঞ্চলে উৎপন্ন বিশেষ জাতের ‘ঘিগজ’ ধানের মুড়ি এর বৈশিষ্টের জন্য বিখ্যাত। এ মুড়ির রং খুব হালকা গোলাপী আভা, দেখতে সুন্দর, খেতে মচমচে এবং সুস্বাদু। অন্যান্ন সাধারন ধানের চাল দিয়েও মুড়ি ভাজা যায়। তবে ঘিগজের মুড়িই সবার কাছে জনপ্রিয়। এ মুড়িকে ঘিরে কয়েকটি স¤প্রদায় গড়ে উঠেছে। এদের বেশীর ভাগই হিন্দু স¤প্রদায় ভূক্ত। অন্যের্ওা একাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। যারা মুড়ির কাজ করে তারা অধিকাংশই নারী। নারীরা বাড়িতে মুড়ি ভাজে, পুরুষরা তা বাজারে বাজারে বিক্রি করে। যুগযুগ ধরে পৈত্রিক ব্যবসা হিসাবে তারা একাজকে বেছে নিয়েছে। অতি স¤প্রতি বাজারে চাল ও জিনিষ পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর খরচও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় বাজার দখল করতে থাকে নিু মানের চালের মেশিনে ভাজা মুড়ি। এগুলো ভাজার সময় দেয়া হয় ইউরিয়া হাইপো ইত্যাদি ধরনের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কেমিকেল। দাম সস্তা দেখে বাজারে এগুলো খুব বিক্রিও হয়। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজার সাথে জড়িত পরিবারগুলো এ অবস্থায় বেকার হয়ে পড়ে। কয়দিন যাওয়ার পর তারা দেখলো, কাজ নাকরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। একসময় তারা বাড়িতে শুরু করলো নিু মানের চাল দিয়ে কেমিকেল মিশিয়ে মুড়ি ভাজা। খরচও অনেক কম। দামে সস্তা হওয়ায় ওদের মুড়ি বিক্রিও হতে লাগলো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে তারা বুঝতে পারলো তাদের শরীরের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ইতিমধ্যে অনেকের হাতে ঘা দেখা দিযেছে। মারাত্মক হাঁপানীতে আক্রান্ত হলো অনেকে। সবচেয়ে ভয়াবহ যেটি তা হলো ছয় সাত মাসে অনেক গর্ভবতীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম লাভ করেছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারলো মুড়ি ভাজতে কেমিকেলের প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা এ কাজটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। অন্য কোনো কাজ তারা জানেনা। দু এক জন এদিক সেদিক কাজ করে সুবিধা করতে পারছিলোনা। অনেকে দেশ ছেড়ে চলেও যায়।এরকম পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর চরবাটার আশিটি পরিবার নিজেরা সংগঠিত হয়ে আবার স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মুড়ি তৈরি করতে থাকে। কারোকাছে হাত না পেতে এরা নিজেদের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতে সচেষ্ট হলো। এরা কেউ সাহায্য কিংবা অনুদানে আগ্রহী নয়। কারন ইতিমধ্যে এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। এখন এরা এদের তৈরী পন্যের ন্যায়্য মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে কয়টি নিদৃষ্ট এলাকায় গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে। বাঙ্গালীর এই অতি জনপ্রিয খাদ্যের মানও তারা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে। তাদের এই মুড়ি এখন বিদেশেও রফতানীর চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে এই কাজটি সম্পুর্ণ নারীদের উপরই নির্ভরশীল । তারা এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অত্যন্ত যতেœর সাথে ঘরে ঘরে মুড়ি ভেজে প্যাকেটজাত করছে। বাজারে এদের পন্যের চাহিদাও রয়েছে খুব। এ কাজ করতে করতে নারীরাও এখন সচেতন হয়ে উঠছে। তারা নিজেরা এখন আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

একদিন সকাল হবে


পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মত পাঁচ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছ,
হতবিহ্বলতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় !
নিশিথ যামিনি ঘোর অন্ধকার
ঘন কুয়াশায় অবগুন্ঠনে ঢাকা।
দিকচি‎‎‎‎‎হ্ণহীন বন্ধু আমার
তোমার সন্মুখে মসজিদ,
ডানে মন্দির, বাঁয়ে গীর্জা
পিছনে স্কুল আড়ে আদালত।
টেলিফোন টাওয়ারের আকাশ ছোঁয়া লাল বাতি,
আকাশে লক্ষ নক্ষত্র শুকতারা
দিগন্ত বিস্তৃত ছায়াপথ
দৃষ্টিহীন তোমার সমস্ত ভূবন।
তবু বন্ধু জেনো, একদিন সকাল হবে-
ঝাউয়ের সুউচ্চ শাখায় ঝলকাবেএকটুকরো সোনালি রোদ্দুর,
মেডিকেল স্কুলের পয়রাগুলো ডানা মেলবে আকাশে।

একদিন সকাল হবে
গীর্জায় অবিরাম বেজে যাবে ঘন্টাধ্বনি
মন্দিরে উলুধ্বনি হবে বাজবে শঙ্খ
মুয়াজ্জিন মসজিদে দিবে সুরেলা আজান।

একদিন সকাল হবে-
শহীদ মিনারের বেদী থেকে দীঘির জলের
কুয়াশার ধোঁয়া ভেঙ্গে কোর্ট চত্বরে
উড়ে যাবে দুটি ছাই রঙ মেঠো চড়ুই।

একদিন সকাল হবে-
অiদালতের রায়ে শশীকান্ত ফিরে পাবে পিতৃ ভিটা।
ফুলে ফুলে ভরে যাবে গীতা বৌদির ছেঁড়া আঁচল।
একদিন সকাল হবে-
তোমার আঁখিতারায় ঝিলমিল জ্বলে জ্বলে
হেসে উঠবে রুপালী শিশির।

বন্ধু জেনো-
একদিন সকাল হবে
একদিন সকাল হবে
একদিন সকাল হবে i

রাধা


সকাল গেলো

দুপুর গেলো
বিকেল গেলো খেলে-
সন্ধ্যা বেলা
ডাগর চোখে
চোখ রেখেছি মেলে।
স্পর্শ গেলো
কষ্ট গেলো
ক্লান্তি গেলো রাধা-
তোমার আমার
অষ্ট প্রহর
হৃদয় হলো বাঁধা।।

রঙ

রঙ দেখেছো রঙ,

শাওন রাতে
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !

রঙ দেখেছো রঙ !!

মুড়ি প্রকল্প

মুড়ি বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে। মুড়ি খায়না এরকম বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া যাবেনা। বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী ভোলা বরিশালের চরাঞ্চলে উৎপন্ন বিশেষ জাতের ‘ঘিগজ’ ধানের মুড়ি এর বৈশিষ্টের জন্য বিখ্যাত। এ মুড়ির রং খুব হালকা গোলাপী আভা, দেখতে সুন্দর, খেতে মচমচে এবং সুস্বাদু। অন্যান্ন সাধারন ধানের চাল দিয়েও মুড়ি ভাজা যায়। তবে ঘিগজের মুড়িই সবার কাছে জনপ্রিয়। এ মুড়িকে ঘিরে কয়েকটি স¤প্রদায় গড়ে উঠেছে। এদের বেশীর ভাগই হিন্দু স¤প্রদায় ভূক্ত। অন্যের্ওা একাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। যারা মুড়ির কাজ করে তারা অধিকাংশই নারী। নারীরা বাড়িতে মুড়ি ভাজে, পুরুষরা তা বাজারে বাজারে বিক্রি করে। যুগযুগ ধরে পৈত্রিক ব্যবসা হিসাবে তারা একাজকে বেছে নিয়েছে। অতি স¤প্রতি বাজারে চাল ও জিনিষ পত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর খরচও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় বাজার দখল করতে থাকে নিু মানের চালের মেশিনে ভাজা মুড়ি। এগুলো ভাজার সময় দেয়া হয় ইউরিয়া হাইপো ইত্যাদি ধরনের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কেমিকেল। দাম সস্তা দেখে বাজারে এগুলো খুব বিক্রিও হয়। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজার সাথে জড়িত পরিবারগুলো এ অবস্থায় বেকার হয়ে পড়ে। কয়দিন যাওয়ার পর তারা দেখলো, কাজ নাকরে বসে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। একসময় তারা বাড়িতে শুরু করলো নিু মানের চাল দিয়ে কেমিকেল মিশিয়ে মুড়ি ভাজা। খরচও অনেক কম। দামে সস্তা হওয়ায় ওদের মুড়ি বিক্রিও হতে লাগলো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে তারা বুঝতে পারলো তাদের শরীরের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। ইতিমধ্যে অনেকের হাতে ঘা দেখা দিযেছে। মারাত্মক হাঁপানীতে আক্রান্ত হলো অনেকে। সবচেয়ে ভয়াবহ যেটি তা হলো ছয় সাত মাসে অনেক গর্ভবতীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম লাভ করেছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারলো মুড়ি ভাজতে কেমিকেলের প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তারা এ কাজটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। অন্য কোনো কাজ তারা জানেনা। দু এক জন এদিক সেদিক কাজ করে সুবিধা করতে পারছিলোনা। অনেকে দেশ ছেড়ে চলেও যায়। এরকম পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর চরবাটার আশিটি পরিবার নিজেরা সংগঠিত হয়ে আবার স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মুড়ি তৈরি করতে থাকে। কারোকাছে হাত না পেতে এরা নিজেদের উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতে সচেষ্ট হলো। এরা কেউ সাহায্য কিংবা অনুদানে আগ্রহী নয়। কারন ইতিমধ্যে এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছে। এখন এরা এদের তৈরী পন্যের ন্যায়্য মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে কয়টি নিদৃষ্ট এলাকায় গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে। বাঙ্গালীর এই অতি জনপ্রিয খাদ্যের মানও তারা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে। তাদের এই মুড়ি এখন বিদেশেও রফতানীর চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে এই কাজটি সম্পুর্ণ নারীদের উপরই নির্ভরশীল । তারা এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অত্যন্ত যতেœর সাথে ঘরে ঘরে মুড়ি ভেজে প্যাকেটজাত করছে। বাজারে এদের পন্যের চাহিদাও রয়েছে খুব। এ কাজ করতে করতে নারীরাও এখন সচেতন হয়ে উঠছে। তারা নিজেরা এখন আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছের্র্

কষ্টপুর

কষ্ট পুরের মেয়ে
কষ্ট করে ছুঁইলে যখন
অমার হৃদয়, কষ্টে গেছে ছেয়ে।

স্বর্ণ চাঁপা রৌদ্রছায়ায়
ফুটেছিলো অপন মায়ায়
যেইনা তুলে পরলে খোঁপায়
কষ্টে গেছে ছেয়ে।

সে ফুলটা একটা মেয়ে
কষ্ট পুরের মেয়ে \

বৃক্ষ


আমার আর এক যমজ ভাই হলে
সে হোতো বৃক্ষ,
আমার আর এক হৃদপিন্ড থাকলে
সে হোতো বৃক্ষ।
আমার পিতার ঔরসে
আর একটি শিশু জন্মালে
সে হোতো বৃক্ষ।
প্রাণ এবং অস্তিত্বের
আর এক শরীর-
সেতো বৃক্ষ।
প্রতিটি বৃক্ষ আমার প্রাণ
প্রতিটি পত্রক আমার নিশ্বাস /

বিশ্বাস

বিশ্বাস হারালে নারী
অবিশ্বাসের সমুদ্রে কে আর বাঁচাবে তোমায় !

যেজন ডুবে যেতে চায় অসম্ভবের বন্যায়,
শরীর জড়িয়ে নেয় কামনার নগ্ন শৈবালে,

তারে কি আর তুলে নিতে পারে
তাব্দীর বিশাল নূহের কিস্তি !

খাদ্যসার্বভৌমত্ব

খাদ্যসার্বভৌমত্ব
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য একদিকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে, রোগ শোক থেকে রক্ষা করে, অন্যদিকে খাদ্য আমাদের নিজস্ব জীবন যাপন এবং সংস্কৃতিরও ধারক ও বাহক। মানবজাতির আদি সভ্যতার সূতিকাগার হোলো কৃষি । মানুষ প্রথম সভ্যতার বীজ বপন করে শষ্য উৎপাদনের মাধ্যমে। সে তার নিজস্ব প্রয়োজনে নিজস্ব আঙ্গিকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য উৎপাদন শুরু করেছিলো। মানুষের সভ্যতার সাথে সাথে কৃষির শতস্ফুর্ত সভ্যতাও সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে গেছে। এই কৃষি সভ্যতার সামান্য বত্যয় ঘটলে মানুষের সভ্যতারও বত্যয় ঘটে। কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা অবজ্ঞা করে কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারেনা । আমরা দেখতে পাই আদিকাল থেকে এই কৃষি উত্পাদনের সাথে মানুষের মূল্যবোধ ও একটি দর্শনও জড়িত রয়েছে । এটা হোলো সে শুধু তার নিজের জন্যই উত্পাদন করেনা সে তার জনগোষ্ঠীর জন্যও খাদ্য উৎপাদন করে। খাদ্য গ্রহন করে সে যেমন নিজে বেঁচে থাকে আবার অপরকেও বাঁচিয়ে রাখে। সুতরাং এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় ,খাদ্য উত্পাদনের সাথে মুনাফার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে জড়িত রয়েছে এক গভীর মুল্যবোধের প্রশ্ন। এ মুল্যবোধই তাকে মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করে দেয়। মানুষ একই সাথে তার নিজের খাদ্য উত্পাদন করে এবং অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যও সে নিশ্চিত করে। খাদ্যের সার্বভৌমত্ব হোলো নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করা এবং সেই খাদ্য উৎপাদনের প্রকৃয়া নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা। এর জন্য তার পরিবেশের দিকেও তাকে নজর রাখতে হয়। তাই কৃষি উৎপাদন শুধু খাদ্য উত্পাদনই নয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ এবং অন্যান্ন প্রাণী জগতের সাথে নিবীড় সম্পর্ক। এ সমস্ত কিছুর সাথে সম্পর্ক রেখেই খাদ্য উত্পাদন করে মানুষের সভ্যতা চলমান রয়েছে। খাদ্যে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে কৃষকের নিজ এলাকার পরিবেশ,সংস্কৃতি ও কৃষি পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন ও জনগনের খাদ্য পাবার অধিকার । এই অধিকারের মধ্যে নিরাপদ,পুষ্টি সম্মত এবং নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল খাদ্যের কথা আছে । খাদ্যে সার্বভৌমত্বের অধিকার একই সাথে জমি পানি বীজ এবং সকল প্রাকৃতিক সম্পদেরও অধিকার বুঝায়। কৃষিতে নারীর অবদান এবং সক্রিয় অংশগ্রহনের সম্পূর্ন স্বীকৃতিও এর সঙ্গে বুঝায়। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেট পুঁজির ব্যবস্থাপনায় কৃষি একটি শিল্প কারখানায় পরিণত হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানীর মুনাফার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে কৃষি। এর ফলে এই অধিকার এখন খর্ব হতে বসেছে। যদিও খাদ্যে সার্বভৌমত্ব মৌলিক অধিকার হিসাবে বহু আন্তর্জাতিক সনদে স্বীকৃত কিন্তু তবুও বিশ্বের বহু দেশ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের পঞ্চাশ কোটি লোক যারা কৃষক ও সরাসরি উৎপাদক হিসাবে কাজ করছে তারা পুষ্টি হীনতার শিকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে এই চিত্র খাদ্য ঘাটতির কারনে হচ্ছে না বরং কৃষক ও গরিব মানুষ সহ খাদ্য উৎপাদক গোষ্ঠীর জমি সম্পদে অধিকার নেই । ফাও মনে করে এর প্রধান কারন খাদ্য সরবরাহে ত্র“টি ও সময় সঠিক মত খাদ্য পাচ্ছেনা বলেই ঘটছে।২০০২সালে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (ফাও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন +৫-এ বিশ্বের সরকার এবং রাষ্ট্র প্রধানরা ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরূদ্ধে একটি অঙ্গীকার ও প্রস্তাব গ্রহন করেছে । অনেকেই মনে করছেন তা বাস্তবে একটি অবাস্তব প্রস্তাব। ক্ষুধা ও অপুষ্টি বানিজ্য উদারিকরনের ফলেই ঘটছে। বিশ্ব ব্যংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই এম এফ) এর বানিজ্য উদারিকরনের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচী এশিয়ার গরিব ঋনগ্রস্ত দেশগুলোকে কৃষি ক্ষেত্রে বানিজ্য নীতি ও উদারিকরনের আওতায় আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এরফলে কৃষক, আদিবাসী জনগোষ্ঠী,নারী ও শিশু সহ সাধারন মানুষ দিনের পর দিন মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হবে তত দিন পর্যন্ত ক্ষুধা দারিদ্র অপুষ্টি থাকবেই। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার খোলা বানিজ্যনীতি এবং গোলকায়নের নানান কৌশল তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রনহীন করে তুলছে। যারফলে কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষক ভূমিহীন চাষী ক্ষেতমুজুর এবং আদিবাসী জনগন এখন জমি পানি এমনকি তাদের বেঁচে থাকার নূন্যতম সুয়োগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় ফলে খাদ্য উৎপাদনে মানুষের অধিকার মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে খাদ্য সার্বভৌমত্বের চরম হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৃষকদের সংগঠনগুলো এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলছে। দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে ভারত ও বাংলদেশ। কৃষিতে বিষের ব্যবহারের বিরুদ্ধে অন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলছে মালয়শিয়ার পেষ্টিসাইড একশান নেটওয়ার্ক (প্যন-এপি)। ২০০৪সালের ২৫-২৭ নভেম্বর ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করবার জন্য অন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে বাংলাদেশ ও ভারত সহ প্রশান্ত মহাদেশীয় অঞ্চল ছাড়াও পৃথিবীর ৩৭টি দেশের ২০০ প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করে। এই সম্মেলনের আয়োজনে ছিলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি সম্পন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষনা )। এই সম্মেলনের গুরূত্ব ব্যখ্যা করে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার এবং এশিয়া প্যাসিফিক রিসার্স নেটওয়ার্ক -এর বোর্ড কনভেনর ইনু রেইকো। তিনদিন ব্যপী এই সম্মেলনে খাদ্যসার্বভৌমত্বের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন উবিনীগের চেয়ারম্যান ফরহাদ মজহার, মালয়েশিয়ার সরোজিনী রেঙ্গম, কানাডার প্যাট মুনি, ফিলিপাইনের টনি টুহান ও র‌্যাফেল মারিয়ানা, পাকিস্তানের শহীদ জিয়া, নিউজিল্যান্ডের জেইন কেলসি, ভারতের পি.ভি.সতীশ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ। এই সম্মেলনে বিভিন্ন চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ খাদ্যসার্বভৌমত্বের বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা দিতে চেষ্টা করেছেন।অধিক খাদ্য উৎপাদনের সস্তা বুলি আউড়িয়ে বহুজাতিক কোম্পানী গুলো কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এর সহায়ক শক্তি হচ্ছে বিশ্ব ব্যংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যংক। কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খাদ্য বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিষাক্ত খাদ্য গ্রহন করে মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপর দিকে শহর গঞ্জ গ্রামে বেঙের ছাতার মত প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল গড়ে উঠছে। বিশ্বায়নের মাধ্যমে মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি ফায়দা লুটছে। তারা কৃষি কেমিক্যালস বীজ ও খাদ্য শিল্পের ব্যপারে কৌশল নির্ধারন করছে ও এক চেটিয়া ব্যবসায়িক প্রভাব বিস্তার করছে। এতে অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর কৃষি সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে খাদ্য উত্পাদনে গুরুত্ব হারাচ্ছে। তারা বিশেষ করে গরীব দেশে দেশে অবাঞ্ছিত ভাবে খাদ্য মওজুদ গড়ে তুলছে। কৃষি শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে এবং রপ্তানীমুখী শষ্য উৎপাদনের ফলে অধিকতর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। ফলশ্র“তিতে কৃষক শ্রমিক ভোক্তা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং আমাদের খাদ্য, জমি, বাতাস ও পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে।মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি জেনেটিক ভাবে উদ্ভাবিত অনুজীব, বীজ ও খাদ্য বিপননের ফলে জনস্বাস্থ্য জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও জীবন ধারনের ব্যপারে নতুন হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে। এই প্রযুক্তি ভুল ও অনৈতিক বিপনন দ্বারা ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের উপর আধিপত্ত বিস্তার করবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পেটেন্ট ‘ল’ বীজ সংরক্ষনের অন্তরায় যা জনগনের খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য সমস্যা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ধান আঞ্চলিক খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী। জমি হচ্ছে খাদ্য, জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতির উৎস। বিবেক বর্জিত বৃহদাকার জমির মালিক ও মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি সরকারের সাহায্যে বানিজ্য উদারনীতি রপ্তানী মূলক খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদনে বিকল্প জমি ব্যবহারের ফলে ক্ষুদ্র চাষিগন ও তাদের পরিবার বর্গ জমি হতে বিতাড়িত হচ্ছে। এভাবে জমি দখলও ত্বরান্বিত হচ্ছে। একে একে হারিয়ে যাচ্ছে খাদ্য স্বয়ংসম্পুর্ণতা, আদি শিক্ষা ব্যবস্থা, বীজ ও প্রাণ বৈচিত্র্য। জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। মৎসজীবীরা হারাচ্ছে তাদের জীবন ও জীবিকা। জল ও নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এক বিশাল জন গোষ্ঠী। মহিলারা অধিক হারে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। অবাধে হচ্ছে সামরিকীকরন। অমানবিক ভাবে হচ্ছে মানব অভিবাসন। বাড়ছে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। ভূমি হীনের সংখ্যা আশংকা জনকভাবে বাড়ছে। এসবের জন্য সচেতন মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। এখন পৃথিবী ব্যাপী দাবী উঠছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তার জন্য। যে সব দাবী গুলো এখন খুবই সোচ্চার সে গুলো হলো-১.সঠিক ভূমি বন্টন নীতি যা ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র চাষি কৃষক পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়েই যারা জমিতে কাজ করে বা পূর্বে উৎখাত হয়েছে সকলকে কৃষি উত্পাদনে সাহায্য প্রদান সহ মহাদেশীয় কর্পোরেশনের প্রভাব মুক্ত রাখা অপরিহার্য। সঠিক ভূমি বন্টন নীতিই কেবল খাদ্য সার্বভৌমত্ব, জমি ও খাদ্য বিষমুক্ত এবং সামাজিক ন্যয় বিচারের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। ২.কৃত্রিম কীটনাশক যা স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি এন্ডোক্রাইন জনিত ক্ষতির কারন হতে পারে তার ব্যাবহার নিয়ন্ত্রন হৃাস বা পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।৩. কর্পোরেশন গুলিকে নিষ্কৃয় করা সহ কীটনাশক বিরোধী আন্দোলনকারীকে সরকার কতৃক হয়রানী ব›দ্ধ করা আবশ্যক। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করা দরকার ।৪.ভোক্তা এবং উৎপাদক উভয়ের পক্ষ হতেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (জি,এম) মাধ্যমে উদ্ভাবিত বীজ খাদ্য এবং কৃষিতে অনুজীবের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে জি.এম. খাদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।৫.কর্পোরেট ও সরকারের জবাবদিহিতা সহ এ্যগ্রো কেমিক্যাল এবং খাবারের উপর যে অন্যায় কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সকল প্রকার অন্যায়ের অবসান করতে হবে।এখন খাদ্যের এ বিষাক্ত আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। মানবজাতির আগামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন জরুরী হয়ে পড়েছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। সবার আগে প্রয়োজন পৃথিবীকে বিষ মুক্ত করা।

বেদনা

এক নিকষ অন্ধকারে
সারা রাত আমার বুকে
মাথা গুঁজে রাখলে।
তোমার নাকের ঘ্রাণ

নোলকের খোঁচা
চুড়ির শব্দ একটি রাত নির্ঘুম করে রাখলো।
একটি সকালের জন্য সবাই ব্যকুল হোলো।
ভোর হতেই তুমি নিঃশব্দে

ফিসফিস করে বল্লে, যাই.......
আমার বুকে বিদ্ধ হোলো

একটি রাত্রি হারাবার তীব্র বেদনা।

লাশ

একদিন খুব ভোরে
তুমি জেগে উঠে দরজা খুলে দেখলে
তোমার আঙ্গিনায় পড়ে আছে
তোমারই রক্তাক্ত লাশ।

বাতাবী নেবুর গাছটার নীচে
স্থির নিশ্চল তোমার নির্জীব লাশ।
কয়টা কাক, কয়টা টুনটুনি লাশটা ঘিরে
ইতি উতি ডাক দিয়ে যায়।

পুলিশ, হাসপাতাল, মগর্, ময়নাতদন্ত
এই সব ঝুট ঝামেলা শেষে
চাপ চাপ রক্তের কফিনে মোড়া লাশ
তুমি ফের তোমার কাঁধে তুলে নিলে।

এই লাশ আর কর্র্পূরের গন্ধ মাখা দেশে
টুনটুনি আর কর্কশ কাকের দেশে
এই রক্তাক্ত কফিনের দেশে
এক দিন তোমাকে খুন হতেই হবে।

জহুরের ডাক

জহুর জহুর জহুর দেখালো পথ
রক্ত দিয়েই আসবে স্বাধীনতা,
জহুরের খুন বাঙ্গালীর ঘরে গেলো
মানবোনা আর জালেমের অধীনতা।

চারিদিকে দেখ আগুনের শিখা উঠে
বন্ধু আজ আর থেকোনাকো ঘরে বসে,
চেয়ে দেখ আজ শোষকের পরাজয়
শোশিত ধরেছে নিজের পাঁজর কসে।

কলমের কালি হবে নাকো কভু শেষ
লিখে যাই আমি আমার স্বদেশী ছবি,
মুক্ত আকাশে শকুনেরা উড়ে আজ
বাংলায় হায় কত কাল আর র’বি।

পোড়া ক্ষেতে আজ কৃষকের পঁচা হাড়
আবর্জনায় লেগেছে আগুন শিখা,
উন্ত ঐ কুকুরেরা হাঁকে পথে
চরদিকে আজ শোনিত রক্ত লিখা।

পেঁচকেরা আজ মরা ডালে ডালে বসে

নিশাচর ওরা ডাকদেয় গুরু গলায়,
বিপ্লবী ডাক এই বুঝি তারই সুর
শোশিত কারেও দেখিনা বট তলায়।

দু’চোখেতে আজ ঘৃনার অগ্নি শিখা
কিশোর মুঠিতে বারুদেরা খেলা করে,
শোষকের হায় ভয়ে বুক থরো থরো
সরু গলি পথে যৌবন খেলা করে।

বাংলা আমার সোনার বাংলা ’পরে
কি বাজ পড়েছে অত্যাচারির রোষে,
সবুজ ক্ষেতেতে শুধু উড়ে ধূধূ বালি
বন্ধু আজ আর থেকোনাকো ঘরে বসে।

সূর্যকে ধরি মোরা আজ শুধু বলি
আঁধারেতে ওরে শপথ নিতেই হবে,
মুক্ত বঙ্গে লাল সূর্যটা যেন উঠে
মোদের রক্ত শীতল হবেরে তবে \

চলে গেলেন প্রবীন সাংবাদিক কামাল উদ্দিন আহ্মেদ






















তকাল রাতে বৃষ্টি হয়নি। তার আগের দিনে ও রাতে অঝোরে বৃষ্টি ঝরেছিলো। আজ সকালটা কিছুটা ঝরঝরে। মেঘ ভাঙ্গা রোদে সকালটা রোদ-মেঘের লুকোচুরি নিয়ে শুরু হলো। আষাঢ়ের ১৯ তারিখ মোঙ্গলবারের সকালটা এরকমই ছিলো। ঠিক এরকম একদিন সকালে কামাল ভাই আমার বাসায় এসেছিলেন। কথা ছিলো আমিই যাব তাঁর কাছে একটা ছবি নিযে। নিঝুম দ্বীপের কেরফা বুড়ির ছবি। বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিনে নিঝুম দ্বীপ। সে দ্বীপের এক অসাধারন নারী প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কেওড়া গাছ ধরে কি ভাবে বেঁচে ছিলো, সে এক কাহিনী। কেরফা বুড়ি ছিলো তার প্রতীক।’৭০ এর ১২ই নভেম্বর, ’৯১ এর ২৯ এপ্রিল। এ দুই গোর্কিকে বুদ্ধি দিয়ে, সাহস দিয়ে দুর্যোগকে ঠেকিয়েছিলেন নিভৃত দ্বীপের কেরফা বুড়ি। ছবিটা আমার কাছে ছিলো। কামাল ভাই তাঁকে নিয়ে লিখেছেন। ছবি দরকার, আমার কাছে ছুটে এসেছেন। বললাম, বসেন। ভরা গলায় বল্লেন, ‘না, রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছি’। গেইটের বাইরে রিক্সা দাঁড়ানো। তিনি বসলেননা । দাঁড়িয়েই কথা বলে ছবি নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। আমার দুই সন্তান রৌদ্র আর বৃষ্টি দৌঁড়ে এসে তাঁকে সালাম করলো। স্নেহে আদরে তিনি ওদের সাথে আরো নিবিড় হলেন। আমার বাড়ির সামনের বাগানের করবীর চিরল পাতার ছায়া নিঙড়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন। ঠিক এরকম একটি সকালে তিনি আবার আমার কাছে এলেন সংবাদ হয়ে। সাংবাদিক বিজন সেন সকালে টেলিফোনে সংবাদটি আমাকে দিলেন। বাইরে তখন মেঘ ভাঙ্গা রোদের মাতামাতি। আমার বাসার সামনে বকুল গাছে অনেক বকুল ফুল ধরেছে। পথের উপরই বকুল ফুল ঝরে পড়েছিলো। লম্বা পাঞ্জাবী, লৃুঙ্গী, গলায় সবুজ পাগড়ীর কাপড় ঝুলিয়ে ঝরা বকুলের বিছানো পথ মাড়িয়ে বকুল করবীর গন্ধ মেখে লম্বা সাদা দাড়ির কামাল ভাই আবার আমার বাড়ীর দরজায় এসে দাঁড়ালেন। এবার তিনি কিছু নিতে আসেননি। এক লহমায় স্মৃতির ঝুড়ি নিয়ে এলেন।আমাদের কৈশোরকাল তখনো কাটেনি। সেই ঊনসত্তর সনের কথা । আমরা কয় বন্ধু মেতে থাকতাম সংস্কৃতি লেখালেখি নিয়ে। নোয়াখালী মৌমাছি কঁচি-কাঁচার মেলার সাংগঠনিক আয়োজনে আমারা থাকতাম নিমগ্ন। সেই সময় থেকে তাঁর সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা । কেতাদুরস্ত কামাল ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী তাঁর। কথার আগে ও পরে শুদ্ধ ইংরেজী ব্যবহার । কখনো কখনো ইংরেজীতে অর্নগল কথা বলেন। মাথায় লেনিনের টুপির মত অবিকল টুপি। দারুন লাগতো। লোকমুখে তাঁর নাম হলো ইংলিশ কামাল। কেন? কারন নোয়াখালীতে কামাল নামে সমসাময়িক আরো আছেন। একই নামে গুলিয়ে যায়। তাই চেনার সুবিধায় এরকম নাম হলো। আরেক জন আছেন নোয়াখালীতে, একই নামে। তিনি বাংলা কামাল। তো এই কেতা দুর¯ত ইংলিশ কামাল কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। তাও আবার মফস্বল সাংবাদিকতা কিন্তু এ দিয়ে তো আর পেট চলবেনা। এর সাথে শুরু করলেন কনট্রাকটরী ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসার চেয়ে তাঁর মন ছিলো সাংবাদিকতার দিকে। দৈনিক বাংলাতেই তিনি সবসময় ছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে তা ছিলো দৈনিক পাকিস্তান। মৃত্যুর পূর্ব পর্যšত তিনি ছিলেন জনকন্ঠের সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার। ঊনসত্তর এর গণআন্দোলনে নোয়াখালীর খবরাখবর গুলো নিয়মিত তাঁর কাগজে স্থান পেতো। সত্তুরের ১২ই নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলে র্গাকীতে যে প্রলয় সাধিত হয়েছিলো, তার সকল খবর তিনি অতি সন্তর্পনে যতেœর সাথে পত্রিকায় পাঠাতেন। সে সময় পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকত তাঁর তোলা ছবি, ফিচার, রিপোর্ট। তাঁর রিপোর্টের ষ্টাইল ধরণ দেখে আমরা তরুনরা উৎসাহিত হলাম সাংবাদিকতায়। এভাবে তিনি আমাদের অনেককেরই গুরু হয়ে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর ছিলো একান্ত সম্পৃক্ততা। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। কলম আর যুদ্ধের ক্ষেত্রে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সাংবাদিকতায় তিনি যেভাবে নিবিষ্ট ছিলেন তা অনেকের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। বৃহত্তর নোয়াখালীর গ্রাম, গঞ্জ , দ্বীপ, চরাঞ্চল তিনি চষে বেড়িয়েছেন। যেখানেই সংবাদের গন্ধ পেয়েছেন একা একা ছুটে গেছেন। শোষিত বঞ্চিতদের পক্ষে তাঁর কলম অ¯েত্রর মত গর্জে উঠতো বারবার। ২০০৩-এর ডিসেম্বরে নোয়াখালীর দক্ষিনে চরাঞ্চলে বনদস্যুদের নির্মূলের নামে নৃশংসভাবে চল্লিশ জন কথিত বনদস্যুকে প্রশাসনের সামনেই পিটিয়ে মারা হয়েছিলো। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ছিলো এক ন্যক্কার জনক হত্যাকান্ড। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তখন এ হত্যাকান্ডকে অনেকেই সায় দিয়েছিলেন। এমনকি অনেক সাংবাদিক মানবাধিকার সংগঠন এ বিষয়ে টু শব্দ করেনি। কামাল ভাইকে দেখেছি এ নিয়ে প্রচন্ড ক্ষোভে লেখালেখি করেছেন। তিনিই বলেছেন বিনা বিচারে মানুষ হত্যা অন্যায়, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাঁর এই প্রতিবাদী লেখা ও রির্পোটের জন্য তাঁর জীবনের উপর হুমকি পযর্ন্ত এসেছিলো। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। একাই লড়েছেন। ন্যায় নীতির পক্ষে কাউকেই তোয়াক্কা করেননি। স¤প্রতি পত্রিকায় সাহসি কিছু লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মান হানির মামলা হয়েছে। সে মামলা মাথায় নিয়েই তিনি মৃত্যু বরন করেন।বছর দশেক আগের কথা, চরাঞ্চলে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। পথে হঠাৎ দেখা হলে তিনি বল্লেন, ‘চল, তোমাকে নিয়ে চরে যাব, কাল সকালে, যেতে পারবে’? আমার সত্যিই জরুরী কাজ ছিলো। কিন্তু তাঁর লোভাতুর সঙ্গও মিস্ করতে চাইছিনা। বল্লাম ঠিক আছে, যাব’। তাঁর সঙ্গ মানেতো একসঙ্গে কাজ করা ও কাজ শেখা। তিনি কার কাছ থেকে যেন একটা হুন্ডা মটর সাইকেল যোগাড় করলেন। সকালেই আমরা দক্ষিনে ছুটলাম। আমি চালাতে চাইলাম কিন্তু তিনি হ্যান্ডেল ছাড়লেন না। সে বয়সেই দক্ষতায় চালাতে লাগলেন হুন্ডা। চরের ভাঙ্গাচোরা রাস্তা । এক অসহায় নারীর ভিটে দখল করতে চাইছে স্থানীয় এক জোতদার। তিনি আমাকে নিয়ে ছুটলেন সেই জায়গায়। পথে একটি পাওয়ার ট্রিলার কেরিয়ারের সঙ্গে মারাত্মক দুঘটনায় পড়লাম আমরা। ব্রেকবিহীন পাওয়ার ট্রিলারের নীচে মটর সাইকেল সহ আমরা প্রায় চাপা পড়ে যাচ্ছিলাম। সরু রাস্তা। কোন রকমে বেঁচে গেলাম। কিন্তু তাঁর একটি পা আটকে গেল গাড়ীর তপ্ত সাইল্যান্সারের সাথে। পায়ের অনেকটা জুড়ে পুড়ে গেলো। ব্যথা ও পেয়েছেন প্রচুর। তবু দেখলাম সবকিছু ঠিকঠাক। নরমাল। সেই স্বভাব সুলভ ইংরেজী, ‘ইট্্স্ নাথিং, বি ইজি’। তিনি আবার গাড়ী চালালেন। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার মটর সাইকেল চালিয়ে বিকেলে ফিরলাম আমরা শহরে। ছবি তোলা আর খুব মাছ ধরার শখ ছিলো তাঁর। তখন তিনি কেতা দুরস্ত ইংলিশ কামাল। মাইজদী বড় দীঘির পাড়ে বড়শি ফেলে বসে আছেন। আমার তখন ক্যামেরার নাড়াচাড়া। তাঁর চর্তুদিকে আমরা কয়জন ঘিরে আছি। নানান কথা নানান গল্প। মাছের প্রতীক্ষা। সূর্য ডুবে গেছে। প্রায় আঁধার। আমি তাঁর ছবি তুলতে গেছি। তিনি হেসে বললেন ছবি তো উঠবেনা। আমি বললাম, ‘উঠবে’। তিনি বললেন, ‘যদি উঠে, ‘এখন যে মাছটা ধরবো তা তোমার’। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিল্ম। সেদিনই ফিল্ম ডেভেলপ করে পরদিন প্রিন্ট করা ছবি তাঁকে দেখালাম। তিনি হেসে পিঠ চাপড়ালেন। বলা বাহুল্য সেদিন তাঁর বড়শিতে কোনো মাছ ধরেনি।‘৯৮ এর বন্যায় নোয়াখালীর অনেক অঞ্চল বন্যার পানিতে দীর্ঘদিন ডুবে ছিলো। বিশেষ করে চাটখিল ও বেগমগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। বৃহত্তর নোয়াখালীর মুজিব বাহিনী প্রধান মাহ্মুদুর রহমান বেলায়েত সহ কামাল ভাই এলাকা গুলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। পানি কিছুটা নেমে গেলে চাটখিলের একটা গ্রামে কৃষকরা আবার ধান বুনতে শুরু করে। তাদের দুর্দশা, দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম, আবার ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যাশা নিয়ে আমরা রিপোর্ট করবো । তখন আমি দৈনিক মুক্তকন্ঠের জন্য রিপোর্ট করছি। কামাল ভাই’র সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি গ্রামে গ্রামে। যেখানেই সংবাদের গন্ধ পাচেছন, যাচ্ছেন। জল কাদায় নেমে ছবি তুলছেন। তাঁর এরকম একটি ছবি দূর থেকে জুম লেন্সে তখন তুলেছিলাম। কামাল ভাই জানেন না। প্রিন্টও করেছিলাম। ভেবেছিলাম কখনো ছবিটি তাঁর হাতে দিয়ে সারপ্রাইজ দেবো । তা আর হয়ে উঠেনি। আজ কামাল ভাই নিজেই সংবাদ হয়ে আমাকেই সারপ্রাইজ করে দিলেন।কামাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আমাদের অনেকের গুরু। তাঁর কাছে আমাদের অনেকের হাতে খড়ি। কিন্তু জীবিত অবস্থায় আমরা তাঁকে সে সম্মাান টুকু দিতে পারিনি। তাঁর অন্তিম যাত্রায় নোয়াখালীর সাংবাদিকরা সবাই তাঁর মরদেহ প্রেস ক্লাবে নিয়ে এলেন। তাঁকে ফুল দিয়ে পুষ্পিত করলেন। তাঁর দেহকে সামনে রেখে এক মিনিট নীরব থাকলেন। নোয়াখালী প্রেসক্লাব নামক ভবনে শোকের কালো পতাকা উঠলো। যে প্রেসক্লাব বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই উদ্বোধন করেন, কামাল ভাই নিজ হাতে ইট বিছালেন। প্রেস ক্লাবকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে আসতে চাইলেন। যে প্রেসক্লাব তিনি হৃদয়ে পুষতেন, সেখানে অনেক কলো কষ্ট জমা হয়ে ছিলো। তাঁর সে হৃদয় থেকে কি আমরা কালো কষ্ট গুলো সরাতে পেরেছি !! এ অঙ্গনকে নিয়ে তাঁর আক্ষেপ ও দুঃখের শেষ ছিলনা। সে অনেক কথা। ক্ষোভের অনলে কষ্টের চিতা দাহ করে যন্ত্রণার ছাই ভস্ম উড়িয়ে লাভ নেই। মানুষের ভিতর মানুষের প্রতিনিয়ত রুপান্তর ঘটে। প্রতি ঘটনার পর মানুষ নিজের ভেতর নিজেই পুনঃজন্ম লাভ করে। কেতাদুর¯ত কামাল ভাইয়ের ভিতর এরকম রুপান্তর ঘটে গেলো । প্রথম জীবনের কেতাদুর¯ত কামাল ভাই আর শেষ বয়সের শ্বশ্র“মন্ডিত কামাল ভাই কি একই কামাল উদ্দিন আহম্মেদ!! তাঁর মাইজদী কোর্টের বাসায় যে ড্রইং রুমে বসে আমরা কথা বলতাম, সে ড্রইংরুমে সাদা কাপড়ে মোড়া নির্বাক কামাল ভাইকে দেখে কি বলা যাবে ইনি কোন কামাল উদ্দিন আহমেদ !!! কামাল ভাইয়ের বিদেহী আত্মা চির শান্তি লাভ করুক।

এই মেয়ে

এই মেয়ে
তুই ঠোঁট কাটা
তোর ঠোঁটের ’পরে
তিল ।

অন্তরে তোর
গোলাপ কাঁটা
চোখ জুড়ে ঝিল
মিল ।

ও মেয়ে
তোর চোখের কোনে
চোখের আমি
বালি।

মন জুড়ে তোর
উথাল পাথাল
রাঙ্গা ফুলের
ডালি।

আড় চোখে
বিষ তীর ছুঁড়ে
তোর চোখের কোণে
নীল।

এই মেয়ে
তুই আগল
ভাঙ্গার পাগল অনা
বিল।

প্রত্যাশা

আঁধার তুমি কোথায় লুকাবে মুখ
একটু পরেই ফুটবে চাঁদের আলো
পেঁচক বলে,‘আঁধারেই আছে সুখ
যেমন আছি তেমনইতো ছিলো ভালো’।
ওঁত পেতে থাকে সারাটা বিশ্ব জুড়ে
ভেজালেরা এসে মিশে যায় কালো দেহে,
কীটের দেবতা বাসা বাঁধে মাটি খুঁড়ে
সূর্য উঠবে আঁধারের মাথা খেয়ে।
একটু পরেই ঘুচবে কালো দুখ্ ,
আঁধার তুমি কোথায় লুকাবে মুখ!